ফায়ের মাহমুদ,জার্মানি থেকেঃ
সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে আবারও কটূক্তি ও বিভাজনমূলক ট্যাগিং ছড়ানো হচ্ছে। “পাকিস্তানি”, “রগকাটা”, “রাজাকার”, “চাঁদাবাজ”, “টেম্পোস্ট্যান্ড দখলকারী”, “ব্যাংক দখলকারী” কিংবা “ইসলাম বিদ্বেষী”—এমন সব অপমানজনক শব্দ প্রকাশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিফলন নয়, বরং নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশিত গণতান্ত্রিক চর্চাকে ব্যাহত করছে।
গঠনমূলক সমালোচনার পরিবর্তে এসব আক্রমণাত্মক ট্যাগিং রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও কলুষিত করছে। অথচ প্রকৃত আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত ছিল—পূর্ববর্তী সরকারগুলোর স্বৈরাচারী আচরণ, গণতন্ত্র দমন, দুর্নীতি, বিচারবহির্ভূত হত্যা, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড কিংবা সাধারণ মানুষের মৌলিক সমস্যাগুলো। রাজনীতির মূল ফোকাস হওয়া উচিত জনগণের স্বার্থ ও ন্যায্য অধিকার, ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নয়।
এনসিপি নিজেকে একটি মধ্যপন্থী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দল হিসেবে পরিচয় দিয়েছে, যারা নতুন রাজনীতির ধারা প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। এই ধারার লক্ষ্য হলো—সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, স্বৈরাচারী রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করা এবং শুধু ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের প্রেরণা নয়, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনাকেও সমানভাবে ধারণ করে এগিয়ে যাওয়া।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেখা যাচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাকসু) নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের অবমাননাকর মন্তব্য, ট্যাগিং ও অশালীন ভাষার মাধ্যমে আক্রমণ করা হচ্ছে। অথচ তারা হাজারো শিক্ষার্থীর ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন—অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের গণরায়েই তারা বৈধ প্রতিনিধিত্ব করছেন।
বিজয়ী প্রার্থীদের অপমান করা মানে শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত মতামতকে অবমাননা করা। গণতন্ত্রে ভিন্নমত থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু প্রতিপক্ষকে হেয় প্রতিপন্ন করা নয়; বরং গঠনমূলক সমালোচনা ও তথ্যনির্ভর আলোচনার মাধ্যমে রাজনীতিকে এগিয়ে নেওয়াই হবে শ্রেয়।
অন্যদিকে, দুঃখজনকভাবে দেখা যাচ্ছে—অনেক জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ নতুন প্রজন্মকে গ্রহণ করতে চাইছেন না। আবার তরুণদের মধ্যেও কিছু ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠদের প্রতি অবমাননাকর মনোভাব দেখা যাচ্ছে, যা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাবোধকেও ক্ষুণ্ণ করছে। একটি সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হলে উভয় পক্ষেরই পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহনশীলতা প্রদর্শন জরুরি।
নতুন প্রজন্ম যদি সত্যিই একটি সুন্দর, গণতান্ত্রিক ও টেকসই বাংলাদেশ গড়তে চায়, তবে অপমানের রাজনীতি পরিহার করে যুক্তি, তথ্য এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতেই এগিয়ে যেতে হবে।