ফায়ের মাহমুদ,জার্মানি থেকেঃ
প্রবাসে থেকেও কেউ কেউ দেশের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন—প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত। ভবিষ্যতেও এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। উল্লেখযোগ্য যে, দু’জনই লন্ডন থেকে—একজন ১৯৭১–৭২ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, আরেকজন ২০২৫–২৬ সালে হবেন বলে আলোচিত। অথচ লক্ষ লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশি বছরের পর বছর বিদেশে কাটিয়েও আজও ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত।
বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন আর শুধু দেশের ভেতরকার শ্রম ও উৎপাদনে সীমাবদ্ধ নয়। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঘাম, ত্যাগ আর রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখছে। অথচ দুঃখজনক বাস্তবতা হলো—দীর্ঘ সময় ধরে প্রবাসে থাকা নাগরিকরা দেশের সবচেয়ে মৌলিক অধিকার—ভোটাধিকার—চর্চা করার কোনো সুযোগ পাচ্ছেন না।
অনেকে ১০, ২০ এমনকি ৩০ বছর ধরে প্রবাসে আছেন। পরিবার, সন্তান, পেশা—সব কিছুই বিদেশে গড়ে উঠেছে। কিন্তু তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রে (NID) ঠিকানা এখনো বাংলাদেশেই। আইন অনুযায়ী তারা নাগরিক, কিন্তু ভোটদানে কার্যত অযোগ্য।
সমস্যার মূল কারণ
1. বাংলাদেশে ভোট দিতে হলে দেশে শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে হয়। প্রবাসীদের জন্য ডাকযোগে বা অনলাইনে ভোটের ব্যবস্থা নেই।
2. কর্মব্যস্ততা ও চাকরির চাপের কারণে অধিকাংশ প্রবাসী ভোটের সময় দেশে আসতে পারেন না।
3. দেশে না থাকলেও তাদের পরিবার, সম্পদ ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সঙ্গেই গভীরভাবে জড়িত—তাই রাজনৈতিক পরিবর্তনে তাদের সরাসরি স্বার্থ রয়েছে।
কেন পরিবর্তন জরুরি
প্রবাসীরা প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠান। রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। অথচ রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে তাদের কোনো ভূমিকা নেই। ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া তাই শুধু আইনগত নয়, এটি এক ধরনের গণতান্ত্রিক অধিকারহরণ।
সম্ভাব্য সমাধান
• দূতাবাস ও কনস্যুলেটের মাধ্যমে ভোটদানের ব্যবস্থা চালু করা।
• অনলাইনে নিরাপদ ভোটিং সিস্টেম চালু করা, যেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র ও বায়োমেট্রিক ব্যবহার হবে।
• ডাকযোগে ভোট পাঠানোর ব্যবস্থা বিবেচনা করা।
বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করতে হলে প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেওয়া অপরিহার্য। তারা শুধু রেমিট্যান্স পাঠানো শ্রমিক নন, বরং বাংলাদেশের পরিচয়, সংস্কৃতি ও সম্মানের বৈশ্বিক দূত।